ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): জাতীয় মহাসড়কে টোল আদায়ের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই টোলের অর্থে একটি আলাদা ফান্ডে জমা হবে এবং সেই অর্থ মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণকাজে ব্যয় হবে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এদিন মোট ১০ প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৩২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ৩২৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৯৯৯ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিজে আমরা টোল নিই। জাতীয় মহাসড়কগুলোতে থাকা (যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক) ব্রিজ ছাড়াও রাস্তার ওপর টোল বসানো হবে। সারাবিশ্বে তাই আছে। টোলে কত টাকা নির্ধারণ হবে, সেটা ঠিক করব এখন। কারণ এভাবে আর পারা যাবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এই টাকা ব্যয় করা হবে রাস্তা মেরামতে। পশ্চিমা দেশে এটা খুবই জনপ্রিয়। এটাকে তারা বলে ‘ইউজার পেইড’ বা ‘ব্যবহার করেন, পেমেন্ট করেন’। এই টোলের টাকা আলাদা অ্যাকাউন্টে যাবে। এগুলো রাস্তার মেরামতে ব্যয় করা হবে।’
কীভাবে টোল আদায় হবে তা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমরা যেটা দেখেছি, সেকশন সেকশন হয়। ধরুন, ২০০ মাইল রাস্তা। প্রত্যেক ৫০ মাইল রাস্তায় একটা গেট থাকে। লং ডিসটেন্স ট্রাভেলারদের (দূরবর্তী যানবাহন) জন্য এটা হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন আমাদের প্রকৌশলীরা।’
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কী সমস্যা হবে সেটা আগে থেকে বলা যাবে না। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। আলোচনার সুযোগ আছে। এখানে অযৌক্তিক কিছু হবে না।’
২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘খেয়াল রাখতে হবে কেউ যাতে টেম্পারিং করতে না পারে। এটা সময়ের দাবি। কিন্তু এমন সিস্টেম করতে হবে যাতে লোক থাকুক আর নাই থাকুক এর উপর দিয়ে গাড়ি গেলেই যেন গাড়ির নাম, নাম্বার, ওজন এবং বিস্তারিত উঠে যায়। এসব তথ্য যেন কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো একটি জায়গা থেকে মনিটরিং করা হয়। তাছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানগুলো যেন নির্দিষ্ট মাপের তুলনায় বেশি না হয়।’
মঙ্গলবার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম (দাসের হাট)-ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্যবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
যানবাহনের অতিরিক্ত ওজনের (ওভারলোড) কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে সড়কের আয়ুষ্কাল। দেশের সড়কের এমন পরিণতি ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধ করতে পারলে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে সড়ক। ‘সওজ আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এক্সেল লোড স্থাপন প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৯০ সেটওয়ে ইন মোশন স্কেল, ৩১ সেট স্ট্যাটিক ওয়ে ব্রিজ স্কেল স্থাপন ও কমিশনিং করা হবে। স্থানগুলো হলো- গাজীপুর সদর, কেরানীগঞ্জ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, শেরপুর নালিতাবাড়ি, কুমিল্লার বুড়িচং, ফেনী সদর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম সদর, সীতাকু-, নরসিংদীর শিবগঞ্জ, সিলেট বিয়ানীবাজার, খুলনা রামপাল, সাতক্ষীরা সদর, চুয়াডাঙার দামুড়হুদা, দিনাজপুরের হাকিমপুর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, শিবচর ও কালিহাতী উপজেলা।
Leave a Reply